বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ২০২৫ সালের মে মাসের জন্য একটি বিশেষ সতর্কবার্তা জারি করেছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার অন্তত একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এই ধরনের মৌসুমি ঘূর্ণিঝড় প্রতি বছর এই সময়ে দেখা গেলেও এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন এবং তুলনামূলকভাবে বেশি তীব্র হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের উপরিভাগের তাপমাত্রা বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, যা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং আন্দামান সাগরের উপকূলে একটি নিম্নচাপের অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে উপগ্রহ চিত্রে।
এছাড়া, তাপপ্রবাহ পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগের কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
রাজশাহী, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, ও সিলেট অঞ্চলে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকেই গরমের প্রবণতা বাড়ছে এবং মে মাসজুড়ে একাধিক দফায় মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশে মে মাস সাধারণত ঘূর্ণিঝড়প্রবণ একটি সময়।
ঐতিহাসিকভাবে “আইলা” (২০০৯), “আমফান” (২০২০) এবং “মোখা” (২০২৩)-এর মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলো মে মাসেই আঘাত হেনেছিল, যার কারণে বর্তমান সতর্কতা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানান, “মে মাসে আবহাওয়া চরমভাবে পরিবর্তনশীল থাকে। একদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকে, আবার অন্যদিকে তীব্র তাপপ্রবাহ জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলে। আমরা সতর্ক নজর রাখছি এবং প্রতিদিনের আপডেট দিচ্ছি।”
উপকূলীয় অঞ্চলগুলো—বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা, পটুয়াখালী, বরগুনা এবং কক্সবাজার—সর্বোচ্চ ঝুঁকির আওতায় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সেখানে ইতোমধ্যেই সিপিপি (Cyclone Preparedness Programme) ও স্থানীয় প্রশাসন প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ বলেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে ৪ হাজার ২০০টিরও বেশি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সেখানে জরুরি খাদ্য মজুত, পানি ও ওষুধ সংরক্ষণ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গরমের তীব্রতা জনজীবন ব্যাহত করছে।
বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে হিটস্ট্রোক, পানিশূন্যতা এবং ত্বকজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই হাসপাতালগুলোকে তাপপ্রবাহজনিত রোগের বিষয়ে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে এবং সাধারণ মানুষকে প্রচুর পানি পান, ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার পরামর্শ দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন মৌসুমি আবহাওয়ার ধরন প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে।
আগে যে সময়ে তাপপ্রবাহ দেখা যেত না, এখন তা দেখা দিচ্ছে। একইভাবে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও গতি বেড়ে গেছে।
পরিশেষে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাধারণ জনগণকে অনুরোধ করেছে ঘূর্ণিঝড় ও আবহাওয়ার সংবাদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য এবং কোনো গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে শুধুমাত্র সরকারি উৎস থেকে তথ্য গ্রহণ করার জন্য।